2016_03_07_17_39_39_4Jy2qNq3hzAoOZpLBAgkxqTbURlM1T_original

লক্ষ্মীপুর: প্রায় সাতশ বছর আগে জার্মানির ছোট্ট শহর হ্যামিলনে ঘটে গিয়েছিল মর্মান্তিক এক ঘটনা। ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ শহরবাসী সাহায্য চেয়েছিল এক অদ্ভুদ বাঁশিওয়ার কাছে। বিনিময়ে দিতে চেয়েছিল মোটা অঙ্কের পুরস্কার। কথামতো বাঁশিওয়ালা তার সুরের জাদুতে শহরটি ইঁদুরমুক্ত করলেও বঞ্চিত হয়েছিলেন পুরস্কার থেকে।

এরপর একদিন বাঁশিওয়ালা সেই শহরে এসে সুরের জাদুতে শহরের সব শিশুকে নিয়ে চিরদিনের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিখ্যাত গল্পটির মতো ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুরে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের রহমানিয়া তালিমুল কুরআন কওমি মাদরাসার হেফজ খানার একজন শিক্ষক হোসাইন ওরফে জসিম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পড়াতেন ওই মাদরাসার শিক্ষার্থীদের।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভালো পাঠদান করতে পারেন না- এমন অভিযোগ তুলে গত ৪ মার্চ মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় তাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষক হোসাইন। মনের দুঃখ সহ্য করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৬ মার্চ দিনগত গভীর রাতে মাদরাসার হোস্টেলে থাকা ৮ শিক্ষার্থীকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে উধাও হয়ে যান শিক্ষক হোসাইন।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গেটে শব্দ হয়। এতে ঘুম ভেঙে যায় সেখানে অবস্থান করা শিক্ষক মনিরুলের। তিনি চিৎকার করলে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্তু তার আগেই শিক্ষক হোসাইন ৮ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

সোমবার (৭ মার্চ) সকালে দূর্গাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন নামে এক অটোরিকশাচালক দুই শিক্ষার্থীকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে। পরে তাদের দুজনকে নিয়ে চলে আসেন মাদরাসায়। এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছে তারা হচ্ছে- রাসেল (১২), আব্দুল্যাহ (১০), জোবায়ের (১০), মুরাদ (১০), রবিন (১০) ও মনির (১০)।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ার রূপী শিক্ষক হোসাইনের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট এলাকায়। তিনি লক্ষ্মীপুরের দিঘলী ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে থেকে মাদরাসায় পড়াতেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম জানান, মাদরাসায় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ শিক্ষার্থী মাদরাসা হোস্টেলে (আবাসিক) থেকে পড়ালেখা করছিল। ৬ মার্চ রাত ২টার দিকে হোস্টেলে থাকা ৮ শিক্ষার্থীকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে পালিয়ে যায় শিক্ষক হোসাইন।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার নুরনবী জানান, শিক্ষার্থীদের ভালো পাঠদান করতে না পারায় গত ৪ মার্চ ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় শিক্ষক হোসাইনকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অন্য কোথাও চাকরি খুঁজে নিতে তাকে এক সপ্তাহ সময়ও দেয়া হয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন জানান, কুমিল্লার কোনো এলাকায় ওই শিক্ষার্থীদের লুকিয়ে রাখা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) আরজুন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জসিম উদ্দিন নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। তবে শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্ধার ও শিক্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।