বাংলাদেশImage copyrightGETTY IMAGES
Image captionবাংলাদেশে এখন প্রায় ৩০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল

কাল থেকে আরো একটি নতুন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু হচ্ছে বাংলাদেশে। ঢাকা বাংলা চ্যানেল নামের এই টেলিভিশনটি নিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংখ্যা এখন প্রায় ৩০এর কাছাকাছি ।

এই খাতে গত কয়েকবছর ধরে প্রচুর নতুন উদ্যোক্তা দেখা যাচ্ছে কিন্তু দর্শকদের তারা নতুন কিছু কতটা দিতে পারছে? আর এসব চ্যানেলগুলো বাণিজ্যিকভাবেই বা কতটা সফল হচ্ছে?

ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান এবং একই সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে এই প্রশ্ন করাতে তিনি বললেন, “প্রতিযোগিতায় যদি টিকতে হয় তাহলে যারা ইতিমধ্যেই বাজারে আছেন, তাদের যে স্টাইল আছে, তার তুলনায় আমাদের অবশ্যই নতুন কিছু থাকতেই হবে। “

তার কথায় অবশ্য ঠিক পরিষ্কার হয় নি নতুন কি স্টাইল তাদের থাকবে যা দর্শক আকর্ষণ করবে। তবে এই স্বকীয় স্টাইলের অভাবের কথাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া।

তিনি মনে করেন, “বাংলাদেশের যে বিশাল জনগোষ্ঠী তাতে ৩০ টা চ্যানেল কিছুই না। এখনো বড় বাজারের সম্ভাবনা বাংলাদেশে আছে। তবে এখানে অনেক চ্যানেল চালু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া হাউজ খুলে বসার প্রবণতা। “

বাংলাদেশImage copyrightMUNIR UZ ZAMAN
Image captionবেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর নতুনত্বের অভাবের কথা বলেন অনেকেই

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো চায় যে তাদের একটা টেলিভিশন থাকুক। কারণ টেলিভিশন একটি শক্তিশালী মিডিয়াম। হাউজগুলো নিজেদের ব্যবসা রক্ষার জন্য বা এক ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার জন্যে যদি টেলিভিশন চ্যানেল চান তাহলে আমি বলবো নতুন কোন চ্যানেলের আর দরকার নেই।”

যে জনগোষ্ঠীর কথা বলছেন মি ভুঁইয়া, সেই অগণিত দর্শকদের কোন অনুষ্ঠান রেখে কোনটা দেখবেন এমন কি কখনো হয়?

বেসরকারি টিভি, চ্যানেল আইয়ের মালিকদের একজন শাইখ সিরাজ বলছেন, বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে বিষয় বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে। আর তাই প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের দর্শক টানা সম্ভব হচ্ছে না অনেকের পক্ষেই।

মি. সিরাজের মতে, “বিষয় বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠানের আমি ঠিক দৈন্য বলবো না তবে ভিন্নমুখিতা নেই। সেই একই নাটক বা গান। ভাল কনটেন্ট গবেষণা হয় তাও বলা যাবে না।”

বাংলাদেশImage copyrightGETTY IMAGES
Image captionএকটি টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সম্পাদনার কাজ চলছে

তার মতে, “ইতিমধ্যেই যারা বাজারে প্রতিষ্ঠিত তাদেরও বিষয় বৈচিত্র্য থাকতে হবে তা না হলে তারাও তো টিকবে না। নতুন চ্যানেল এসে তার বাজার দখল করে নেবে। কিন্তু নতুন চ্যানেলগুলো আরো ভাল বিষয় বস্তু দিয়ে দর্শক টানার চেষ্টাও করছে বলে মনে হয়না। কারণ তা হলে তো দর্শকরাও চলে যেতো। সেটাও তো হচ্ছে না”

টিকে থাকতে হলে দর্শকের পাশাপাশি পৃথিবীর সকল মিডিয়া হাউজের দরকার বিজ্ঞাপনের। বাংলাদেশেও টেলিভিশনের মুল আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপন আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় কতটা টিকছে বাংলাদেশের বেসরকারি টিভিগুলো?

মি. সিরাজ বলছেন, সেটা যাচাই না করে এবং প্রতিযোগিতার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিয়েই অনেক সময় চালু হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেল।

তিনি বলছেন, “এখন যেভাবে চ্যানেল বাড়ছে তাতে মার্কেট ফিজিবিলিটি নিয়ে সন্দেহ আছে। সেটা বিচার না করে নতুন চ্যানেল শুরু করা উচিত নয়। অর্থ লগ্নি তখনই আপনি করবেন যখন সেই অর্থ ফেরত আসবে”

অন্যদিকে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে শুধু দেশেই নয় দর্শক টানতে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে ভারতীয় চ্যানেল গুলোর সাথেও। তাছাড়া বিজ্ঞাপনদাতারাও ইদানীং সরাসরি বেছে নিচ্ছেন ভারতীয় টিভি।

তবে অধ্যাপক ভুঁইয়া বলছেন, তারপরও বাংলাদেশে বছরে বিজ্ঞাপনের বাজার বছরে এগারোশ কোটি টাকার মতো এবং আর তা ক্রমশই বাড়ছে। তবে এ অভিযোগও রয়েছে যে বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় অনেক সময় অনুষ্ঠানই দেখা যায়না।