নোয়াখালীর পাতা ডেস্ক:

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ ফ্লাইট সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৪৬ তম শহীদ দিবস ১৫ ফেব্রুয়ারি। অথচ; দীর্ঘ এই ৪৬ বছরেও তাঁর নিজ জেলা নোয়াখালীতে এই বীর শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নেই কোনো স্মৃতি চিহ্নও।

১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী শহরের সোনাপুরে জন্মগ্রহণ করেন সার্জেন্ট জহুরুল হক। ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। ওই বছরই যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে। পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে হন ফ্লাইট সার্জেন্ট।

তৎকালীন পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত থাকায় ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হন জহুর। পাকিস্তান সরকার তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য) দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামী করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। মামলায় ৩৫ জন আসামীর মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭ নম্বর আসামি।

মামলার বিচারকার্য চলাকালে ৬৯’র ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা ক্যান্টমেন্টে বন্দি শিবিরের সামনে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করতে আসা শিশুদের অমানুষিক নির্যাতন করছিলো পাকিস্তানী সেনারা। এর প্রতিবাদ করেন বন্দি সার্জেন্ট জহুর। এনিয়ে হাবিলদার ‘মনজুর শাহ’র সাথে তাঁর বাকযুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে মনজুর শাহ রাইফেলের বেয়নেট লাগিয়ে ধেয়ে আসেন জহুরের দিকে। রাইফেলটি ছিনিয়ে নেন সাহসী জহুর, পরে তিনি সেটি আবার হাবিলদার মনজুরকে ফেরত দেন।

কিন্তু পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে সার্জেন্ট জহুর ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন। পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে নেওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ এ। ওইদিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সার্জেন্ট জহুরুল হক।

এদিকে স্বাধীনতার জন্য সার্জেন্ট জহুরের অবদানকে নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে সোমবার বিকেলে মাইজদী টাউন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে শহীদ জহুর-অদুদ পরিষদ।