
বাংলাদেশের ঊপকূলে মওসুমি বায়ূর ঘনঘটা। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমি বায়ু চট্টগ্রাম পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আগামী তিনদিন দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে আরও অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার জ্যৈষ্ঠের শেষ দিন এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে বর্ষণ হচ্ছে। গেল কয়দিনের অব্যাহত বর্ষণে দেশের প্রধান প্রধান নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আকাশ জুড়ে মেঘের মেলা আর বৃষ্টির নিক্কনে এলো ‘বর্ষাদূত’। দেখতে দেখতে আবারো বছর ঘুরে আষাঢ় দুয়ারে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টি নামুক বা না নামুক, কদম নিজেকে মেলে ধরুক বা নাই ধরুক আজ বুধবার বাংলা ক্যালেন্ডারে পহেলা আষাঢ়। বাঙালি জীবনে ঋতু বর্ষার গুরুত্ব অনেক। বর্ষার দ্বিতীয় মাস শ্রাবণ। এই সময়ে বাংলার প্রকৃতি অবগাহন করবে সজীব বারিধারায়।
কাব্য কথায় এসেছে, ‘আষাঢ়স্য’ প্রথম দিনেই নাকি কদম বনে হলদে-সাদা মঞ্জুরীর উচ্ছ্বাস বইতে শুরু করে। বাংলা প্রকৃতিতে দৃশ্যমান হতে থাকে স্নিগ্ধতার অন্যরকম আবেশ। “মেঘে আঁধার হল দেখে/ ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,/ শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে/ কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।/আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু/শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।/ কালো? তা সে যতই কালো হোক,/ দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।”- কবি এখানে আষাঢ়কে মানবীর চিত্রকল্পে অংকিত করেছেন। এছাড়া প্রচলিত একটি বাংলা জারি গানে আছে-“আইলোরে আষাঢ় মাস /লাগাইলো চারা গাছ/গাছে গাছে ঝগড়া করে/মূল্য বেশি কার?” বর্ষণসিক্ত পরিবেশ বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবেই বিবেচ্য স্মরণাতীতকাল থেকে। সারাদেশে বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়ে থাকে এ মাসেই।
বঙ্গাব্দের অন্যান্য মাসের মতো আষাঢ়ের নামকরণও হয়েছে তারার নামে। সে তারার নাম ‘আষাঢ়া’। অথৈ পানি তার বৈভব। ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’সহ নিসর্গ চেতনা প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিক মনকেই আলোড়িত করে। শিল্পীর বেলায় তো এর আবেদন ঢের বেশি হয়। এ সময়ে আরো ফোটে শাপলা, পদ্ম, চালতা, কেতকী ফুল। ‘কবি শেখর’ কালিদাস বর্ষা ঋতুকে নিয়ে কমপক্ষে ত্রিশটি কবিতা লিখেছেন। ‘ছন্দের জাদুকর’ খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বর্ষাকেন্দ্রিক কবিতাগুলো হলো ‘বর্ষা’, ‘ইলশে গুঁড়ি’ ও ‘বর্ষা নিমন্ত্রণ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষাপ্রীতি তা রীতিমতো প্রবাদতুল্য। এছাড়া আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, শক্তিমান কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা প্রমুখ কবি বর্ষাকে তাদের সাহিত্যকর্মে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। চিত্রশিল্পীরাও বর্ষাকে ক্যানভাসে আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পটুয়া কামরুল হাসানের ‘বৃষ্টির দিনে খেয়া ঘাট’ শীর্ষক চিত্রকর্মটি আজো অনন্য হিসেবে স্বীকৃত। জ্যৈষ্ঠের ফলের সমাহার এ মাসে এসেও লক্ষণীয়। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লুকলুকি, জামরুল, লিচু, লটকন – আরও কতো দেশীয় ফল!
আষাঢ়ের আরেক পরিচয় উৎসবের দেশে উৎসবের মাস। বিশেষ করে ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’, পালনকারীদের কাছে বড়ই আরাধ্য এ মাস। কে না জানে এ মাসে রথযাত্রা উৎসব হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, পুরীর জগন্নাথের স্মরণে এই উৎসব টেনে নিয়ে যায় এবং স্নান করিয়ে ফিরিয়ে আনে। এই প্রত্যাবর্তনই ‘উল্টো রথযাত্রা’ নামে পরিচিত। এ উপলক্ষে বসে মেলা। গ্রামবাংলায় তো মেলা মানে সার্বজনীন আনন্দ জোয়ার। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) সর্বশেষ ১৩৯০ বঙ্গাব্দে প্রণীত ‘বাংলাদেশের মেলা’ গ্রন্থে ৬৮টি আষাঢ়মাসী মেলার কথা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মাত্র ১৬টি ছাড়া বাকি ৫২টিই রথযাত্রা কেন্দ্রিক। রথযাত্রা কিংবা উল্টো রথযাত্রা মেলা সর্বাধিক সংখ্যক বসে ময়মনসিংহ জেলায়, ১৫টি। এছাড়া বসে জামালপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, পাবনা, যশোর, রাজশাহী, ফরিদপুর জেলায়। তবে ঢাকার ধামরাই ও মানিকগঞ্জের রথযাত্রা উৎসবের খ্যাতি দেশজোড়া।
বর্ষা উপকারী না অপকারী বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। সজল বর্ষা প্রকৃতিতে ফুরফুরে আমেজ আনলেও নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বেড়ে গিয়ে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তবে বিদিত যে, পানির সাথে পলি বয়ে এনে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা হিসাবে বাংলাদেশকে বিনির্মিত করেছে বর্ষা ঋতুই। তাই প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ আষাঢ়কে বলেছেন- ‘ধ্যানমগ্ন বাউল- সুখের বাঁশি’। বিদায়ী মাসের পুরোটাই ছিল দাবদাহের দাপট আর বৃষ্টির ব্যাকরণ না মানা আধিক্য।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত ক্ষণস্থায়ী কিংবা প্রলম্বিত হচ্ছে। এটাও সত্য যে বর্ষা ‘কারো জন্য পৌষ মাস, কারো জন্য সর্বনাশ’। বিশেষ করে ছুতোর সম্প্রদায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতদিন কাজ করছে। কাঠের তক্তা ‘রানদা’ দিচ্ছে, ‘পাতাম’ ঠুকে নৌকা বানাচ্ছে। গলুইওয়ালা নৌকা, কোষা, ডিঙ্গি নৌকা ইত্যাদি। বর্ষার নতুন পানি পেয়ে সোনা ব্যাঙের দল সমস্বরে গেয়ে উঠবে ‘গ্যাঁকো-গ্যাঁকো’, মাছ শিকারে নামবে পেশাজীবী, সৌখিন মানুষ। উৎফুল্ল ময়ূরের মতোই যেন মানবকুল বিশেষ করে ভাবুকেরা মনের পেখম তুলে অনির্বচনীয় অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে। কেউ কেউ আনুষ্ঠানিকতায় বর্ষাকে বরণ করে নেবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- কাজী অফিস নোয়াখালী চৌমুহনী
- চাটখিলের শাহাপুরে আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন
- বন্ধু জুতা সেলাই করছেন, পাশে বসে গল্প করছেন মাশরাফি
- গতকাল থেকে খালেদা জিয়ার জ্বর
- জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন সমন্বয়ে প্রকাশ্যে পানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান !
- নোয়াখালীতে মহিলা বিষয়ক দপ্তরে জাতীয় পতাকা না করায় তদপ্ত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করার অনুরোধ
- নোয়াখালীতে পূজামন্ডপ পরিদর্শন ও অনুদান প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী
- ব্র্যাক এর সহযোগীতায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত
- মেডিকেল সেন্টার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু, ভবিষ্যতে এটি নোবিপ্রবির আধুনিক হেলথ রিচার্স সেন্টারে উপনিত হবে – প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন
- বিআরটিএ নির্দেশনায় সুশৃঙ্খলভাবে পথ চলার আহবান করেন: জেলা প্রশাসক ও প্রকৌশলীগন
Leave a Reply