খোলা কলাম | তারিখঃ June 9th, 2016 | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 717 বার

আনোয়ারুল হক আনোয়ার:
বিশে^র ১৬০ কোটি মুসলমানের প্রতিনিধিত্বকারী একক সংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামিক সংস্থা (ওআইসি) কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে ? না কি অন্য কারো এজন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে ? এ প্রশ্নটি সচেতন মহলের। বসনিয়ায় স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের পাখির ন্যায় গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। নারী-শিশু কাউকে রেহাই দেয়নি নরপিশাচ সার্ব বাহিনী।
বিশে^র প্রধান সমস্যা ফিলিস্তিনী ইস্যু। লাখ লাখ ফিলিস্তিনী যুগ যুগ ধরে পথে ঘাটে অবস্থান করছে। মিয়ানমারে কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমানকে নিজ মাতৃভুমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। উগ্র বৌদ্বরা হাজার হাজার নিরীহ নিরপরাধ রোহিঙ্গা মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আফগানিস্থান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় যেভাবে রক্তের হোলি খেলা চলছে-তাতে ওআইসি কি ভূমিকা পালন করেছে ?
আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে যাহা স্বল্প পরিসরে শেষ করা যাবেনা। সর্বশেষ তুরস্কের আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তীব্র মতবিরোধের কারনে বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়নি। আর এটা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ওআইসি মারাতœক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
ওআইসি গঠন ও এর উদ্দেশ্য ঃ ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্বে কয়েকটি মুসলিম দেশ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সন্মুর্খীন হয়। এসময় ইসরাইল বিস্তীর্ণ আরব ভূমি দখল করে নেয়। ১৯৬৯ সালের ২১ আগষ্ট ইসরাইল জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মুসলিম বিশে^ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
এরপর মিশরের রাজধানী কায়রোতে ১৪টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরী বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সৌদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাব করেন যে, যেহেতু ঘটনাটি মুসলিম বিশে^র জন্য স্পর্শকাতর তাই সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করা হোক।
বৈঠকে সৌদী আরব, ইরান, পাকিস্তান, মরক্কো, মালয়েশিয়া, সোমালিয়া ও নাইজারকে নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়। যার সুবাদে একই বছরের ২২-২৫ সেপ্টেম্বর মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ২৫টি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওআইসি গঠিত হয়।
ওআইসি’র উদ্দেশ্য ঃ ৭টি উদ্দেশ্য নিয়ে ওআইসি গঠিত হয়।
এর সদর দফতর সৌদী আরবের জেদ্দায় অবস্থিত। (১) সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইসলামী সংহতি বৃদ্বি করা।
(২) বর্ণ বৈষম্যের মূলোৎপাটন এবং উপনিবেশবাদ বিলোপের চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
(৩) সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগীতা সূ-সংহত করা এবং আন্তর্জাতিক ফোরাম সমূহে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করা।
(৪) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করা।
(৫) পবিত্র স্থান সমূহের নিরাপত্তা বিধানের সংগ্রামকে সমন্বিত ও সূ-সংহত করা, ফিলিস্তিনী জনগনের নায্য সংগ্রামকে সমর্থন করা, তাদের অধিকার আদায় মাতৃভূমি রক্ষার কাজে সাহায্য প্রদান করা।
(৬) মুসলমানদের মান মর্যাদা, স্বাধীনতা ও জাতীয় অধিকার সংরক্ষনের সকল সংগ্রামে মুসলিম জনগনকে শক্তি যোগানো।
(৭) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সহযোগীতা ও সমঝোতা বৃদ্বির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সুষ্টি করা।
ওআইসি ভাইরাসে আক্রান্ত হবার লক্ষন সমূহ ঃ ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্বকে কেন্দ্র করে আরব দেশগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে মূলতঃ সংস্থাটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে বিশে^ মুসলিম দেশের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের শ্লোগানটিও বেগবান হয়।
এরপর থেকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ওআইসি প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগঠনগুলোকে অকুন্ঠ সমর্থন প্রদান করে। বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার যুবক ফিলিস্তিনী ভাইদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্বে গেরিলা যুদ্বে অংশগ্রহন করে।
কিন্তু এক সময় রহস্যজনক কারনে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। তখন ইসরাইলী বাহিনী ফিলিস্তিনী জাতির উপর বর্বরোচিত হামলা শুরু করলে আতœরক্ষার্থে ”হিজবুল্লাহ গেরিলা সংগঠন” আতœপ্রকাশ করে ইসরাইলের বিরুদ্বে বীরের ন্যায় রুখে দাঁড়ায়। প্যালেস্টাইনীদের নির্বিচারে হত্যা, দখলদারিত্ব বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ওআইসি’র তরফ থেকে এযাবত দেড় শতাধিকবার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তেমনিভাবে বিশে^র অন্যান্য মুসলিম দেশে আগ্রাসনের বিরুদ্বেও ওআইসি তেমন কোন জোরালো ভূমিকা রাখেনি। অর্থাৎ ”নিন্দা” ও ”আহবান” দু’টি শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের কর্তব্য সম্পাদন করেছে। গঠনতন্ত্রের (৬) ধারায় বলা হয়েছে যে, মুসলমানদের মান মর্যাদা, স্বাধীনতা ও জাতীয় অধিকার সংরক্ষনের সকল সংগ্রামে মুসলিম জনগনকে শক্তি যোগানো। কিন্তু দূঃখ হয়, যখন দেখি ইরাক,আফগানিস্থান, লিবিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশকে ধ্বংশ করার জন্য সৌদী আরবের নেতৃত্বে আইএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকা ও ইসরাইল বিদ্রোহীদের ট্রেনিংসহ সর্বাতœক সহায়তা প্রদান করে আসছে। তখন ওআইসি প্রভাবশালী একাধিক দেশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
ন্যাটোর একমাত্র সদস্যদেশ তুরস্কের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক ও বানিজ্যিক সূ-সম্পর্ক রয়েছে। সৌদী আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথেও ইসরাইলের বেশ দহরম মহরম আজ কারো অজানা নয়। উপসাগরীয় রাজা বাদশারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে পশ্চিমা দেশে। সৌদী গোয়েন্দা মন্ত্রীর সাথে যখন ইসরাইলী গোয়েন্দা মন্ত্রীর বৈঠকের খবর জানতে পারি-তখন ওআইসি নামক সংস্থাটির নীরবতার লজ্জা রাখি কোথায়।
কয়েকমাস পূর্বে সৌদী আরব তাড়াহুড়ো করে মুসলিম সামরিক জোট গঠনের উদ্দেশ্য কি ? এ জোটের রুপরেখা কি ? কাদের বিরুদ্বে যুদ্ব করবে মুসলিম সামরিক জোট? ইরানের সাথে বৃহৎ ৬ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পাদিত পারমানবিক চুক্তি বানচাল করার জন্য সৌদী আরবসহ কতিপয় উপসাগরীয় দেশ কোমর বেঁধে নেমেছিল কেন ? তাদের স্বার্থ কি ?
চুক্তির বিরোধিতা করতে পারে ইসরাইল। কিন্তু সৌদীদের এত মাথাব্যাথা কেন ? নাকি তারা আমেরিকা-ইসরাইলী এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে নেমেছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশে^র সর্বত্র মুসলিম নামধারী যতগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে সৌদী আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরন শুরু হয়েছে দশ বছর পূর্বে। এখন ইসরাইলের সাথে সৌদী আরব, কাতার, আরব আমিরাত ও কুয়েতের গভীর সম্পর্ক। এখন শুধু বাকী আছে এক দেশ অপর দেশকে স্বীকৃতি প্রদান। সিরিয়া যুদ্বে সৌদী আ্রব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, জর্ডান ও ইসরাইল বিদ্রোহীদের সহযোগীতা করছে। ইসরাইল সিনাই উপত্যাকায় ভ্রাম্যমান ফিল্ড হাসপাতাল চালু করে সিরীয় বিদ্রোহীদের চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ওআইসি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে। আজ ফিলিস্তিনী জাতি নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই কেন? উত্তর একটাই-আর সেটা হচ্ছে, মুসলিম দেশেগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ”ওআইসি” এখন মারাতœক ভাইরাসে আক্রান্ত।
ভাইরাস তাড়াতে না পারলে শুধু ওআইসি কেন উপরোন্ত কোন সংস্থাই মুসলমানদের উপকারে আসবেনা। যখন নিজেদের মধ্যে কোন ’এজেন্ট’ প্রবেশ করে তখন আর ভাল কি আশা করা যায়। সামরিক শাসন জারির পর পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউল হককে পশ্চিমা সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল ”মার্শাল-ল কি” ?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ”যখন কোন্ জাতি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়-তখন উক্ত ভাইরাস দূর করতে শরীরে এক জাতীয় ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হয়।
এটাকে বলে মার্শাল-ল”। তাই ওআইসির ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী কতিপয় দেশের শরীর থেকে ভাইরাস দূর করতে না পারলে সংস্থাটি প্যাড সর্বস্ব সংগঠনে পরিণত হবে। এটাই নির্মম বাস্তবতা।
(লেখক ঃ সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ও ব্যুরো চীফ দৈনিক ইনকিলাব এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- কাজী অফিস নোয়াখালী চৌমুহনী
- চাটখিলের শাহাপুরে আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন
- বন্ধু জুতা সেলাই করছেন, পাশে বসে গল্প করছেন মাশরাফি
- গতকাল থেকে খালেদা জিয়ার জ্বর
- জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন সমন্বয়ে প্রকাশ্যে পানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান !
- নোয়াখালীতে মহিলা বিষয়ক দপ্তরে জাতীয় পতাকা না করায় তদপ্ত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করার অনুরোধ
- নোয়াখালীতে পূজামন্ডপ পরিদর্শন ও অনুদান প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী
- ব্র্যাক এর সহযোগীতায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত
- মেডিকেল সেন্টার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু, ভবিষ্যতে এটি নোবিপ্রবির আধুনিক হেলথ রিচার্স সেন্টারে উপনিত হবে – প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন
- বিআরটিএ নির্দেশনায় সুশৃঙ্খলভাবে পথ চলার আহবান করেন: জেলা প্রশাসক ও প্রকৌশলীগন
Leave a Reply