2016_05_16_17_53_27_VIpYsHVY5ijCZX4S0yHvw46UG2zGwS_original

হাতিয়া প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে কার্ডধারী জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মকালে বাধা দেয়ায় চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ইউপি সচিবকে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় সচিবকে প্রায় চারঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কৌশলে পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

রোববার (১৫ মে) দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। সোমবার ইউপি সচিব ছিদ্দিকুর রহমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগ নোয়াখালীর উপ-পরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার কার্ডধারী জেলের মধ্যে সরকারিভাবে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করার কথা ছিল। ওয়ার্ড ভিত্তিক ইউপি সদস্যদের (মেম্বার) তালিকাভূক্ত ৩৮৯জন কার্ডধারী জেলের মধ্যে এ চাল বিতরণ শুরু হয়। হঠাৎ দুপুরে চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন তার মনগড়া একটি তালিকা এনে সচিবকে বলে ওই তালিকায় টিপসহি নেয়ার এবং চালগুলো তার লোকজনকে দেয়ার ব্যবস্থা করতে। এতে সচিব তার পক্ষে এ অনিয়ম করা সম্ভব নয় বলার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান সচিবের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। সচিব অশভোন আচরণের প্রতিবাদ করায় উপস্থিত মেম্বার ও কার্ডধারী জেলেদের সম্মুখেই তাকে বেদড়ক মারধর করে চেয়ারম্যান। তার এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথিতে সচিবের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেতলে যায়। পরে সচিবকে তার কক্ষে সন্ত্রাসীরা প্রায় চার ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলেদের ৮০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা ছিল। পরে সচিবকে অবরুদ্ধ করে রেখে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার সন্ত্রাসীরা ৩০ থেকে ৩৫ কেজি করে চাল বিতরণ করে অন্যগুলো নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সচিব স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাত-মুখ ধোয়ার কথা বলে কৌশলে পরিষদ থেকে বের হয়ে হাতিয়া উপজেলা শহরে চলে আসে।

ভুক্তভোগী সচিব ছিদ্দিক আহমেদ জুয়েল বলেন, চেয়ারম্যানের ভূয়া তালিকা অনুযায়ী চাল দিতে অস্বীকার করায় এবং তার অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করায় তাকে বেদম মারধর করে চেয়ারম্যান। তিনি কৌশলে পরিষদ থেকে বের হয়ে রাতে উপজেলা শহরে এসে ডাক্তার দেখান এবং বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। সোমবার নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত দেন। একই সাথে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককেও অবিহিত করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তিনি কর্মস্থলে নিরাপদ নয়। তাই তিনি বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। এ ঘটনার সুরহা হলে বা কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুযায়ী তিনি কর্মস্থলে যাবেন।

তবে সচিবকে মারধর ও চাল বিতরণে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন ওরফে মেহরাজ পার্টি।

তিনি বলেন, কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন সচিব তাদের চাল দিচ্ছে না, বলেছে চাল নাকি অন্য কেউ তার নাম করে নিয়ে যায়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সচিবের কাছে বিষয়টি জানতে চান তিনি। কিন্তু সচিব এর কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং তার সামনে খাতাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এতে সচিব ও তার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এক পর্যায়ে তালিকাভুক্তদের মধ্যে চালগুলো তিনি উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছেন।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন সচিবের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সচিব বলছে চেয়ারম্যান তাকে মারধর করেছে। আবার চেয়ারম্যান বলছে তিনি মারধর করেননি। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’