Tajul & Mostopa

গোলাম মহি উদ্দিন নসু
“আমার ছোট মেয়ে রোকেয়া আছিল গর্ভে। কোলে ছিল আলেয়া। আরো ছোট তিন শিশু বাচ্চাকে এতিম করছে পাকিস্তানীরা। আমি হইছি বিধবা। যুদ্ধশুরুর কয়েকদিন পর আমার স্বামীর লগে অন্য দুই ভাইরেও ধরি লইগেলো। একমাস পরে জানলাম উনারে মারি বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা কালা পুলের উত্তরে পালাই রাখছিলো। এলাকার লোকজন রাস্তার পাশে মাটি ছাপা দিছে। সেই থেকে জানি এটা আমার স্বামী তাজুল ও ভাসুর মোস্তফার কবর। মাঝে মধ্যে আই। কবর দেখি যাই। আমার ছেলেরা ইট দিয়ে ঘিরা দিয়ে রাখছ্ েকিন্তু সরকার কোন ব্যবস্থা না করাতে কেহ ভাঙ্গি হালাইতো চায়। কবরটি সরকারীভাবে দেখাশুনা করা আর আঁর এতিম ছেলোগোর লাই সরকার যদি কোন ব্যবস্থা করে- এটা আমার মরনের আগের আশা। আমার স্বামীর কোন সম্পদ ছিল না। বাচ্চাদের বাচানোর জন্য আমার বোনের জ্মাাই মনির মেম্বর ফেনীর ছাগলনাইয়া এতিম খানায় দিয়া দিছিলো। সে থেকে অভাব অনটনের মধ্যে আজও বাঁিচ আছি, আমরা আপনাদের সহযোগীতা চাই।”
নোয়াখালী কাদির হানিফ ইউনিয়নের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের স্ত্রী অজিমা খাতুন(৭০) কান্না জড়িত কন্ঠে এ সব কথা বলেন।

পারিবার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শহীদ তাজুলের কবরে তারই সহদর ভাই মোস্তফাকেও এখানে দাফন করা হয়েছিল। কবর দু’টি সরকারীভাবে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে তাজুলের বড় ছেলে বুদ্ধি আলম ৬/৮/১৫ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে। মন্ত্রী ঔদিনেই কবরটি সংরক্ষনের ব্যবস্থা নিতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরজমিন তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ পূর্বক ৩০/১২/১৫ তারিখে নোয়াখালীর এলজিআরডির নির্বাহী প্রকোশলীকে কবর দু’টি সংস্কার ও মেরামত করে নতুন সাইনবোর্ড দেয়ার জন্য চিঠি প্রেরন করে। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ১৯/১/১৬ তারিখে চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে সাফ জানিয়ে দেয়, এ সংক্রান্ত কাজের জন্য এলজিআরইডি বিভাগে কোন বরাদ্ধ নেই।
অযতেœ থাকা দুই মুক্তিযোদ্ধার কবরের সম¥ান রক্ষার ব্যবস্থার আশায় গুড়েবালি। উপেক্ষিত হলো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশ।
সরকারী বিভাগের এমন অসহযোগীতামূলক আচরনে তাজুলের পরিবার হতবাক। তাজুলের বিধবা স্ত্রী ৭০ বয়োষর্দ্ধো আজিমা খাতুনের সাথে আলাপ চারিতায় আরো জানা যায়, তার স্বামী একজন কৃষিজীবি ছিলেন। একই সময়ে তিনি নোয়াখালী জেলাধীন আনসার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর থেকেই পিটিআই স্কুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। তার অপর দুই ভাই মোস্তফা মিয়া, আবুল খায়েরও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। প্রথমে ফেনীতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ীতে আসেন। এলাকার রাজাকাররা খবর পেয়ে এক গভীর রাতে তাজুলদের তিনভাইকে ধরে নিয়ে যায়। বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাাল স্কুলে পাকিস্তানী আর্মি ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতন করে এবং কালা পোলের কাছে গুলি করে । তাজুল ও মোস্তফা ঘটনাস্থলে মারা যায়্। সৌভাগ্যক্রমে তাদের বড় ভাই খায়ের মিয়া গুলি বিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যায়। মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের ভোলাওয়াশ্বা নুরনবীর বাড়ীতে এক মাসের বেশী সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে গ্রামের দলু জমাদার বাড়ীর মুক্তিযোদ্ধা আরজু মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগম(৫৬) জানান, তারই বাবাসহ তাজুল ও মোস্তফাকে কালা পুলের উত্তরে প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে (বর্তমান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের সামনে) মাটি চাপা দেয় মায়ের কাছে কথাটি বলতে শুনেছেন।
স্থানীয় শহীদ ছালেহ আহাম্মদ স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ওরপে নেতা বাবুল বলেন, একই কবরে সমাহিত দুই মুক্তিযোদ্ধার কবরটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলার শিকার। অনতি বিলম্বে সরকারীভাবে কবরটি সংরক্ষন করে মুক্তি যোদ্ধার মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক।
উল্লেখ্য, গত ১৫.১১.১৫ তারিখে বেগমগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ফেরদাউস আলম সরকার শহীদ তাজুল ও মোস্তফার কবর সরজমিন তদন্তকালে বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামন্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী, ডিপুটি কমান্ডার আবদুল মালেক, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন কমান্ডর মহিউদ্দিন, আমানউল্যাপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আবুল বসারসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। #