icddrb20160405134428

 বিশেষ সংবাদদাতা:

দেশে প্রতি পাঁচজন বিবাহিত নারীর একজন স্থুল অথবা অধিক ওজনের অধিকারী। স্থূলতার কারণে তাদের ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থূলতা এবং অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি ।

আইসিডিডিআর,বির সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে স্থূলতার জন্য সম্পদ সূচক, শিক্ষার অবস্থা, টেলিভিশন দেখার সময়কাল এর মতো বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চিহ্নিত কারণগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিবাহিত নারীদের স্থূলতার ব্যাপকতাকে হ্রাস করা সম্ভব বলে সুপারিশ করা হয়। ২০১৬ সালে আইসিডিডিআর,বির পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান হরিবন্ধু শর্মা, আইসিডিডিআর,বি এবং আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নিয়ে ১৮ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের (যারা বর্তমানে বিবাহিত বা পূর্বে ছিলেন) অধিক ওজন এবং স্থূলতা সংশ্লিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১১ এর পুষ্টি সংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।

সম্প্রতি গবেষণাটির ফলাফল বিএমসি ওবেসিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় গবেষণার আওতাভুক্ত ১৬ হাজার ৪ শ’ ৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশই অধিক ওজনের অধিকারী অথবা স্থূল। শহরে বসবাসরত নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে যুক্ত নারীদের চেয়ে পূর্ণ মাত্রার কর্মজীবী নয় এমন নারীরা অধিক ওজন এবং স্থূল হবার দেড়গুণ (১.৪৪ গুণ) বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গার ধনী ও খাদ্য সুরক্ষিত পরিবারের নারীরা অধিক ওজন এবং স্থূল হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।

আইসিডিডিআর,বির পুষ্টি এবং ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগ এর জ্যেষ্ঠ পরিচালক এবং এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘স্থূলতার এই উচ্চ মাত্রা আমাদের দেশের চিকিৎসা বাজেটে প্রভাব ফেলবে। যদি এর মোকাবেলা করা না হয় তবে অধিক ওজন এবং স্থূলতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে।

প্রধান গবেষক হরিবন্ধু শর্মার মতে, ‘স্থূলতা সমস্যার ক্রমবর্ধমাণ অবস্থা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জনস্বাস্থ্যখাতের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঐতিহ্যগতভাবে স্থূলতা এবং অধিক ওজনের সমস্যা বৃহদার্থে ধনী-দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাধারণত অপুষ্টি এবং সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় সম্পদ ব্যয় করবার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে তাই তাদের অবশ্যই পুষ্টি সংশ্লিষ্ট অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায়ও মনোনিবেশ করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থূলতা এবং অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি।  গবেষক শর্মা মনে করেন বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাঝে এই সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেতে স্থূলতা সংশ্লিষ্ট সূচকসমূহ যেমন শারীরিক কার্যকলাপ, টিভি দেখার সময়কাল, কিভাবে প্রাপ্ত বয়স্করা অবসর সময় কাটায় এবং খাদ্যগ্রহণ বিষয়ক তথ্য গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব প্রদান করেন।

এই পরীক্ষামূলক গবেষণা ও অনুসন্ধান বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরের নারীদের স্থূলতা এবং অধিক ওজন সমস্যা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঠিক কৌশল মূল্যায়নে সহায়তা করবে। শহর ও গ্রামের নারীদের স্থূলতা প্রাদুর্ভাব কমাতে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম অপরিহার্য। স্থূলতা মোকাবেলায় বিদ্যালয়ে, সমাজে এবং কর্মক্ষেত্রে স্থূলতার পরিণতি, শারীরিক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধকরণ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার।
অধিক ওজনের সমস্যা মোকাবেলায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় পুষ্টিগত অবস্থা প্রতিনিয়ত পদ্ধতিগত মূল্যায়ন ও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর কমপক্ষে ২৮ লক্ষ মানুষ অধিক ওজন এবং স্থূলতার কারণে মারা যায়। বিশেষ করে নারীদের জন্য স্থূলতা নানাভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। স্থূলতার কারণে তারা ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে বলে প্রমাণিত।

মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।