Road-120160401153651

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে নিহত-আহতের সংখ্যা। নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে নিহতের তালিকায়। পঙ্গু হচ্ছেন হাজারো মানুষ। পিষ্ট হচ্ছে অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন।

চালকের অদক্ষতা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়িকেই প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বিচারহীনতাকেও দুর্ঘটনার বড় একটা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুয়া ও অদক্ষ চালকদের হাতে যানবাহন থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর বিচার কিংবা শাস্তির নজির কমই।

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য সামনে আসে। হাইওয়ে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায় গত সোয়া এক বছরে মহাসড়কে ১ হাজার ৮০২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯১০ জন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৯২ জন ও সামান্য আহত হয়েছেন ৩৮১ জন। এসব ঘটনায় মামলার সংখ্যাও কম নয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ২শ ৬৭টি মামলা দায়ের করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

তবে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি যে তথ্য দেয় তাতে আরো ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অঙ্গহানী হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১ হাজার ৩০৫ জন।

সূত্র জানায়, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং ভুয়া চালকদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে হাইওয়ে পুলিশের প্রসিকিউশনে মামলা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১৭৫টি। এরমধ্যে সরাসরি মামলা ২৬ হাজার ১৩৩টি, স্পিডগানের মাধ্যমে মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৭০৩টি। বাকি মামলাগুলো হয়েছে টহলের সময়।

সোয়া এক বছরে জরিমানা করা হয়েছে সোয়া এক কোটি টাকা।

হাইওয়ে পুলিশের দাবি, মামলা হয়, বিচার হয় না। মামলার পর আসলে হাইওয়ে পুলিশের আর কিছু করার থাকে না। মামলার পর ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং ভুয়া ও অদক্ষ চালকদের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এরপর কেউ তদবিরে, কেউ কিছুদিন সাজা খেটে আবারো মহাসড়কে নেমে পড়েন। আর এ কারণে কমানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মহাসড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ হচ্ছে কুমিল্লা, মাদারীপুর, বগুড়া, গাজীপুর রেঞ্জ।

মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মল্লিক ফকরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব রাস্তায় নিরাপত্তা দেয়া। দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই হাইওয়ে পুলিশকেই দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু সত্যিকারার্থে মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ কী? ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালকদের হাতে যানবাহন এবং ট্রাফিক আইন না মানা। এসবের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের সম্পর্ক মাত্র একটিই। তাহলে ট্রাফিক আইন না মানা হলে মামলা কিংবা জরিমানা করা। এর বেশি কিছু ক্ষমতা নেই হাইওয়ে পুলিশের।

কিন্তু ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ভুয়া ও অদক্ষ চালক রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারে যাদের ব্যর্থতার তাদের নিয়ে কোনো কথা হয় না। দুর্ঘটনার জন্য তাদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন তিনি।

ট্রাফিক আইন সম্পর্কে নিজেকে সচেতন ও অপরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের শৃঙ্খলাসহ আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। অবৈধ যানবাহন নছিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার বন্ধ করতে পারলে অনেকাংশে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করেন তিনি।