up Logo

নিজস্ব প্রতিনিধি:
দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কবিরহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪টি এবং আ.লীগ বিদ্রোহী ৩টিতে নির্বাচিত হয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জের ৮টির মধ্যে সবগুলোই আওয়ামীলীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নির্বাচিতরা হলেন, কবিরহাট উপজেলার সোন্দলপুর ইউনিয়নে নুরুল আমিন রুমি, নরোত্তমপুরে এ কে এম সিরাজ উল্যা বি.কম, চাপরাশিরহাটে মহিউদ্দিন টিটু, ধানশালিকে ইয়াকুব নবী এবং ধানসিঁড়িতে মো. আবদুল মন্নান (আ. লীগ বিদ্রোহী), বাটইয়াতে মো. মিজানুর রহমান (আ. লীগ বিদ্রোহী) ও ঘোষবাগে মো. মহসিন মিন্টু (আ. লীগ বিদ্রোহী)।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৮টির মধ্যে সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫টি কেন্দ্র স্থগিত হওয়ায় ওই কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। এছাড়া অপর ৭টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন, চর পার্বতীপুর ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম, চর হাজারীতে নুরুল হুদা, চর কাঁকড়ায় সফি উল্যাহ, চর ফকিরায় জামাল উদ্দিন লিটন, রামপুরায় ইকবাল বাহার চৌধুরী, মুছাপুরে নজরুল ইসলাস শাহিন এবং চর এলাহী ইউনিয়নে আব্দুর রাজ্জাক।

ভোট চলকালে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করেছেন। কেন্দ্র বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রিজাইডিং অফিসারগণ। কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে বিএনপির দুই প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোটগ্রহণ চলে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এসময় কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে নারীসহ অন্তত ১৫জন আহত হন।

জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একদল অস্ত্রধারী দূর্বৃত্ত মোহাম্মদপুর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের বাহিরে ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়ে এবং দৌলত আরা নামের এক মহিলা ভোটারকে কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় কেন্দ্রের পাশ থেকে ১৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ মিনিট ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে প্রিজাইডিং অফিসার।

একইসময় ওই ইউনিয়নের আল মোবারক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ব্যালট বক্স ভাঙচুর ও পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেলে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন প্রিজাইডিং অফিসার মাওলানা জাকির হোসেন।

সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রে হামলা, ব্যালট পেপার, সিল ছিনতাই ও কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহজাদপুর সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়, পশ্চিম মোহাম্মদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যোগিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজপুর পিএল একাডেমি, চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আমিন মেমোরিয়াল হাই স্কুল (চরকাঁকড়া একাডেমি) এবং মধ্য চরকাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (শিশু নিকেতন) কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন স্ব-স্ব প্রিজাইডিং অফিসারগণ।

এদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাহির থেকে সিল দিয়ে অবৈধ ব্যালট পেপার ব্যালটবক্সে প্রবেশ ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নরোত্তমপুর মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন প্রিজাইডিং অফিসার।

এদিকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি ইউনিয়নে বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন তোতা ও দুপুর ১টার দিকে চরপারবর্তী ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন ভোট বর্জন করেন।

বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মতিন তোতা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চরলেংটা কেন্দ্রে তার স্ত্রী ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা তার স্ত্রী’রির কাছ থেকে ব্যাল পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যায় ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জন করেন।
কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে চরপারবর্তী ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আমিন ভোট বর্জন করেন।

এছাড়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার অন্তত ২০টি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হন। আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি কেন্দ্রে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়েন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম ৮টি কেন্দ্রের ও কবিরহাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান ১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জিকেআরটি/নোয়াখালীরপাতা/৩১ মার্চ ২০১৬