file

স্বাস্থ্য ডেস্কঃ সম্ভবত আঙুর প্রথম এসেছে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ তবে আজকাল বেশিরভাগ আঙুর আসে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ প্রাচীন গ্রিকদের কাছে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে আঙুরের তৈরি ওয়াইনকে ‘দেবতার রক্ত’ বলা হতো, যা আজও প্রতীকি চিহ্ন বহন করে ৷ জার্মানিতে প্রচুর আঙুরের বাগান রয়েছে৷ সারা বিশ্বে যত রকম গাছের চাষ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে আঙুর সবচেয়ে পুরনো ৷ আঙুর শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুস্বাদু ফল৷ তবে হালকা সবুজ রংয়ের আঙুর থেকে লাল বা গাঢ় সবুজ রংয়ের আঙুরে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে৷ আঙুরে ভিটামিন সি তেমন না থাকলেও আঙুর ইনফেকশন থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে৷ গরমকালে যথেষ্ট আঙুর খেলে শীতকালেও সুস্থ থাকা যায় – এমনটাও শোনা যায়৷

দেহকে সুস্থ রাখার অনেক উপাদান প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে। আঙুর এমনই একটি অসাধারণ সুপার ফুড হিসেবেই পরিচিত। খুব সাধারণ দেখতে এই আঙুর ভিটামিন এ, বি৬, বি, ফোলেট, পটাশিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি মিনারেলসে ভরপুর।

আর একারণেই প্রতিদিন মাত্র আধাকাপ পরিমাণে আঙুর দূর করার ক্ষমতা রাখে নানা শারীরিক সমস্যা। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন মাত্র আধা কাপ আঙুর।

১) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে –

আঙুরের পাতলা খোসায় রেসভেরাট্রোল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের দেখা মেলে। গবেষণায় দেখা যায় এই রেসভেরাট্রোল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠন করতে বাঁধা প্রদান করে থাকে।

২) হাড়ের সুস্থতায় আঙুর

অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ বোন অ্যান্ড মিনারেলস রিসার্চের মতে আঙুর মাইক্রো নিউট্রিইয়েন্টস যেমন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাংগানিজে ভরপুর একটি ফল যা হাড়ের গঠন এবং মজবুত হওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরী। ডাক্তাররা বলেন প্রতিদিন আঙুর খেলে হাড়ের যেকোনো ধরণের সমস্যা এবং বয়সজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব বিশেষ করে হাড় ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা জাতীয় সমস্যা।

৩) হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে আঙুর

আঙুরের ফাইটোকেমিক্যাল হৃদপিণ্ডের পেশির ক্ষতি নিজ থেকেই পূরণে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। প্রতিদিন আঙুর খেলে হৃদপিণ্ডের সুস্থতা এবং দেহের কলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৪) হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আঙুর

অর্গানিক এসিড, চিনি এবং সেলুসাস যা লেক্সাটিভের উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী যা আঙুরের মধ্যে বিদ্যমান। এছাড়াও আঙুরে প্রচুর পরিমাণে ইনস্যলুবেল ফাইবার রয়েছে যা আমাদের পরিপাকনালী পরিষ্কার রাখে।ডাক্তাররা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের নিয়মিত আঙুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৫) দৈহিক দুর্বলতা প্রতিরোধে আঙুর

রক্তস্বল্পতা বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা আমাদের দেশে খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। রক্তসল্পতার কারণে দুর্বলতা, অল্পতেই হাপিয়ে উঠার প্রবণতা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধান করে আঙুর। আঙুরের আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মিনারেল রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রতিদিন আঙুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৬) কিডনির সমস্যা দূর করতে আঙুর

আঙুরের ইউরিক এসিডের এসিডিটি কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে এসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কিডনির ওপর চাপ কমায়। এছাড়া আঙুর পানি জাতীয় ফল হওয়ার কারণে কিডনি পরিস্কারের কাজে সাহায্য করে এবং কিডনির যেকোনো সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত রাখে।

৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে আঙুর

 দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত থাকলে দেহে কোনো রোগ বাসা বাঁধতে পারে না। আঙুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লেভানয়েড, মিনারেল, ভিটামিন সি, কে এবং এ। এইসবই আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন আঙুর খাবার অভ্যাস করুন।
৮) ভুলে যাওয়া
অনেকে ছোট ছোট বিষয়গুলো দ্রুত ভুলে যান। আবার কোনো ঘটনা বেমালুম স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এটা কিন্তু একধরনের রোগ, হেলাফেলার কিছু নয়। এই রোগ এড়াতে খেতে পারেন আঙুর।
৯) মাথাব্যথা
হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেল। এ সময় আঙুর খেলে আরাম বোধ হবে।
১০) চোখের স্বাস্থ্য
চোখ ভালো রাখতে কার্যকর এই ফল। বয়সজনিত কারণে যাঁরা চোখের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য ভালো দাওয়াই এই ফল।
১১) স্তন ক্যানসার
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন এমন রোগীরা খেতে পারেন আঙুর। গবেষণায় দেখা গেছে, আঙুরের উপাদানগুলো ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম।

১২) ওজন কমাতে

সপ্তাহ দুয়েক প্রতিদিন বিচি ও খোসাসহ ২ কেজি আঙুর আর সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি বা গ্রিন চা পান করলে কয়েক কেজি ওজন কমানো সম্ভব৷ তবে সে আঙুর হতে হবে অবশ্যই কোনো রকম কেমিকেল ছাড়া পুরোপুরি অর্গানিক উপায়ে চাষ করা৷ আঙুরের বড় গুণ – শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের দেয় ৷

১৩) ত্বকের সুরক্ষায়

আঙুরে থাকা ফাইটো কে​মিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। আর আছে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে।

১৪)বয়সের ছাপে বাধা

শরীরের ফ্রি রেডিকেলস ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়। আঙুরে থাকা ভিটামিন সি আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়ে, শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

১৫) চুলের যত্নে

দীঘল চুল একটু অযত্নেই খুশকিতে ভরে যায়। চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে। ধূসর রঙের হয়ে যায় কখনো। সব শেষে চুল ঝরতে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন আঙুর। শুধু চুল ভালোই থাকবে না, মাথায় নতুন চুলও গজাবে।

আঙুরের খোসা এবং বিচিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে৷ আঙুরে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় যা শরীরের বাড়তি পানি কমিয়ে প্রয়োজনীয় পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করে ৷ শুধু গ্রিন টি বা সবুজ চা নয়, আঙুরও তারুণ্য ধরে রাখতে এবং রূপ লাবণ্য বাড়তে সাহায্য করে ৷