নোয়াখালীর পাতা ডেস্ক:

সম্পূর্ণ বিনা খরচে ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারী এবং মা ও শিশুদেরকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। মানসম্মত চিকিৎসা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও রোগীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহারের ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এখন পুরো জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচিত। প্রতিদিন নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি পাশের জেলা থেকেও এখানে রোগী আসছে।

নোয়াখালী জেলা সদর থেকে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরের ইউনিয়ন দুর্গাপুর। ২০০১ সালের জতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ধর্মীয় নেতা ও সমাজপতিদের বাধার কারণে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলেন এই ইউনিয়নের নারীরা। উন্নয়নে অনেকটা পশ্চাৎপদ এই জনপদের আশপাশে ভালো কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল না অনেক দিন থেকে। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিও নানা সংকটে প্রায় অকার্যকর ছিল। ২০১৪ সালের ২৩ জুন থেকে ইউপি চেয়ারম্যান এম এ জলিল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সচল ও আধুনিকায়নের কাজে হাত দেন। যাতায়াতের সড়ক মেরামত, রোগীদের জন্যে উন্নত মানের শয্যা, ফ্যান, ঔষধ রাখার জন্য ফ্রিজ সহ আনুসাঙ্গিক সহযোগিতা দেন তিনি। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ঔষধের পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে অন্যান্য ঔষধ তিনি নিজ খরচে সরবরাহ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ইউএস আইডি’র সেভ দ্যা চিলড্রেন মা মনি প্রকল্পের সহায়তা নেন তিনি। বর্তমানে এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন দুইজন প্যারামেডিক, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। আউটডারে প্রতিদিন একজন উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও সপ্তাহে দুইদিন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদেরকে ব্যবস্থাপত্র ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভবতি মা, নবজাতক, শিশু সহ সব ধরণের রোগী এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরছে প্রয়োজনীয় সেবা পেয়ে থাকেন।

গর্ভবতী অনেক মা জানান, এরআগে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পর সিজারিয়ান অপরাশেন ছাড়া সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া অসম্ভব বলে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হলেও এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে প্রয়োজনীয় সেবা পান তারা। এখানে ভূমিষ্ট প্রত্যেক নবজানককে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নতুন জামাকাপড় উপহার দেয়া হয়। ভালো সেবা পাওয়ায় প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে গর্ভবতী মায়েরা এখানে ছুটে আসেন। গ্রামের গরীব রোগীদের পাশাপাশি এখন শহরের অনেক অবস্থাপন্ন পরিবারের লোকজনও এখানে সেবা নিতে আসতে দেখা যায়। প্রতিমাসে এখানে শতাধিক নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। এই পর্যন্ত নয় শতাধিক গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে এখানে। প্রত্যেকটি মা ও শিশু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিলে যান।

উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবদুল মোতালেব জানান, ইউনিয়নেরর সকল গর্ভবতী মায়ের তালিকা রাখেন তারা। এরপর মাসিক সভায় তাদের বিয়য়ে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয় এবং সে অনুযায়ী নিয়মীত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চেকআপ, ডেলিভারি ও ডেলিভারি পরবর্তী প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হয় এখানে।

এখানে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা সভা আয়োজন করে লোকজনকে নানা বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি সেবার মানের দিক দিয়ে পুরো জেলায় মডেল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এখান থেকে দেখে জেলার অন্য অনেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তিনি।